১৭ জুন আস্তানায় দ্বিতীয় চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ‘চীন-মধ্য এশিয়া চেতনা প্রচার, আঞ্চলিক সহযোগিতার উচ্চ মানের উন্নয়ন জোরদার করা’ শীর্ষক বক্তৃতা দিয়েছেন।
এতে তিনি বলেন, গত দুই বছরে চীন ও মধ্য এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পুঁজি বিনিয়োগ, সবুজ খনিজ উত্তোলন, ও বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা সক্রিয়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। চীনের দেওয়া আর্থিক সহায়তা প্রকল্পগুলোও সার্বিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। গত দুই বছরে সবুজ শিল্প, ডিজিটাল অর্থনীতি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মহাকাশ প্রযুক্তি দুই পক্ষের সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। আন্তঃদেশীয় ই-কমার্স এবং অনলাইন শিক্ষার মতো নতুন শিল্পগুলো চীন ও মধ্য এশীয় জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনছে।
বক্তৃতায় তিনি বলেন, বিশ্বে নতুন হাঙ্গামা এবং পরিবর্তনের সময় শুরু হয়েছে। শুধু ন্যাযতার মনোভাব পোষণ করে, জয়-জয় সহযোগিতার মনোভাবে নিয়ে, বিশ্বের শান্তি রক্ষা করা যায় এবং যৌথ উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা যায়। বাণিজ্য যুদ্ধে কেউ জয়ী হবে না। একতরফাবাদ, সংরক্ষণবাদ এবং আধিপত্যবাদ শুধু নিজের ও অন্যের ক্ষতি করে। আমাদের উচিত ‘চীন-মধ্য এশিয়ার চেতনা’ অনুসরণ করে, আরো সক্রিয় মনোভাবে এবং আরো বাস্তব-ভিত্তিক ব্যবস্থা নিয়ে সহযোগিতা জোরদার করা।
তিনি কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেন:
প্রথমত, পারস্পরিক বিশ্বাস ও সমর্থনের উপর ভিত্তি করে ঐক্যের মূল চেতনা অবশ্যই সমুন্নত রাখতে হবে। চীন সর্বদা নিজের প্রতিবেশী কূটনীতিতে মধ্য এশিয়াকে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করে এবং সুপ্রতিবেশীসুলভ, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি, সৌহার্দ্য, আন্তরিকতা, পারস্পরিক সুবিধা এবং অন্তর্ভুক্তির নীতি মেনে চলে আসছে। আমাদের স্বাক্ষরিত ‘চিরস্থায়ী বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান ও সহযোগিতা চুক্তি’ আইনগতভাবে ছয় দেশের সম্পর্কের ইতিহাসে একটি নতুন মাইলফলক স্থাপন করবে।
দ্বিতীয়ত, সবার বাস্তব অবস্থা, দক্ষ ও গভীরভাবে সমন্বিত সহযোগিতার বিন্যাস সর্বোত্তম করতে হবে। সব পক্ষ ২০২৫-২০২৬ সালকে ‘চীন-মধ্য এশিয়া সহযোগিতার উচ্চমানের উন্নয়নের বছর’ হিসেবে মনোনীত করেছে। সবার নিরবচ্ছিন্ন বাণিজ্য, শিল্প বিনিয়োগ, সংযোগ, সবুজ খনিজ, কৃষি আধুনিকীকরণ, কর্মী বিনিময় ইত্যাদির উপর মনোনিবেশ করতে হবে, আরও সুনির্দিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব প্রাথমিক সাফল্য অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
তৃতীয়ত, অবশ্যই একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল নিরাপদ পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে, যেখানে সবাই সুখ-দুঃখ ভাগ করবে। অবশ্যই আঞ্চলিক নিরাপত্তা শাসনকে শক্তিশালী করতে হবে এবং আইন প্রয়োগকারী ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর করতে হবে।
চতুর্থত, পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং বন্ধুত্বের সাংস্কৃতিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করতে হবে। চীন মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর আইনসভা, রাজনৈতিক দল, নারী, যুব, মিডিয়া এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সহযোগিতা জোরদার করবে, শাসনব্যবস্থা পরিচালনায় গভীর অভিজ্ঞতা বিনিময় করবে এবং সবুজ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও দুর্নীতি দমনে অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেবে।
পঞ্চমত, অবশ্যই একটি ন্যায্য, যুক্তিসঙ্গত, সমান এবং সুশৃঙ্খল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে। চীন আন্তর্জাতিক বিষয়ে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে বৃহত্তর ভূমিকা পালনে সমর্থন করে এবং আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার রক্ষা করতে এবং আধিপত্য ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরোধিতা করতে সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করতে চায়।
সূত্র:শুয়েই-তৌহিদ-জিনিয়া,চায়না মিডিয়া গ্রুপ।