- জাকিয়া রহমান, লিমেরিক, আয়ারল্যান্ড
গত ২৮শে মে, ২০২৩ ভাষা শহীদদের স্মরণে, অতি আকাঙ্ক্ষিত তৃতীয় বইমেলা, রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে অতি জাকজমকের সাথে পালিত হলো। প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত করেন আইরিশ সরকারের পরিবহন মন্ত্রী মিঃ জ্যাক চাম্বারস এবং বিশেষ সম্মানিত অতিথিবর্গের মধ্যে ছিলেন এমিরিটাস অধ্যাপক সেলিম হাশেমী প্রমুখ আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত শিক্ষা ও প্রযুক্তিবিদ, চিকিৎসবৃন্দ, গুনী কবি ও সাহিত্যিক। সুদূর আটলান্টিকের পাড়ে এ ধরনের মেলা পালনের কান্ড কারখানা একসময় উন্মাদের কল্পনার সামিল ছিল। আজ তা সম্ভব হয়েছে অতি পরিশ্রমী বাঙালি ভাইবোনাদের জন্যে। আয়োজক কমিটির সফল সংগঠক কঠোর পরিশ্রমী জনাব সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান ও ডাবলিন বাংলাদেশ কমিউনিটির সভাপতি জনাব মোহাম্মদ মোস্তফা, কবি ও লেখক সাজেদুল চৌধুরী রুবেল, লেখক ডাঃ আরমান রহমান, সাজিলা চৌধুরী সিঁথি, শায়লা শারমিন নিপা, সায়মা শহীদ লিফা এবং রুনা জলিল, মেহেদী হাসান, মাসুদ শিকদার, শাহাদাত হোসেন, রন্টি চৌধুরী প্রমুখ।
Dublin City University তে অবস্থিত Stokes Building এ বই মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। শত শত মানুষের উদ্দীপনাময় উপস্থিতে মেলা গৌরবান্বিত সম্মুজল হয়ে উঠে। সকল সহযোগী ভাই বোনেরা একটি চমৎকার আয়োজন ও পরিচালনা করার জন্য সহস্র আভিনন্দন ও শুভেচ্ছা ও শুভকামনার দাবীদার।
বাংলা আমাদের প্রাণের ভাষা, তেমনি আয়ারল্যান্ডে আইরিশদের মাতৃভাষা গেইলিক। আমরা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে বাংলা ভাষাকে রক্ষা করেছি। আজ বাংলা ভাষা রক্ষার্থে ১৯৫২ সালে ২১শ ফেব্রুয়ারিতে শহীদ ভাষা বীরদের স্মরণ করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সারা বিশ্ব জুড়ে পালিত হয়। জাতিসঙ্ঘের এই নির্দেশ আমাদের বাংলা ভাষার অস্তিত্বতের গর্ব। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আইরিশরা তাদের মাতৃভাষা গেইলিক চিরতরে হারিয়েছে। ব্রিটিশদের আট শত বছর গোলামির সময় এই ভাষাকে ইংরেজরা নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। যদিও আয়ারল্যান্ডের মূল ভাষা ‘ইংরেজি’ ১৯৪৯ সালে ইংরেজের হাত থেকে দেশকে রক্ষার পর গেইলিক ভাষার চর্চা শুরু হয়েছে। এরূপ পরিণতি অবশ্যি অধুনা যুগের চাহিদা মিটানোর জন্যে দায়ী। যেমন, আমরা অভিভাসী বা প্রবাসী বাঙালিরা এমন কি বাংলাদেশের বাঙালিরাও আজকাল ইংরেজী ব্যবহার করতে বাধ্য। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও নিম্নগামী কর্মসংস্থান ব্যবস্থা, বাঙালি অভিভাবকরা সন্তানদের ইংরাজী ভাষায় পারদর্শী হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় অর্থভার বহন করেন। আজ সারা বিশ্বেই ইংরাজী ভাষার কদর বেড়ে চলছে। তবুও দেখা যায়, বাংলা ভাষার চর্চা সারা বিশ্বের বাঙালিদের কাছে সমাদৃত এবং আশ্চর্যজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ এক দারুণ আশার কথা! তাই হয়তো আয়ারল্যান্ডের মতো দেশে, যারা আজ থেকে বেয়াল্লিশ বৎসর আগে, আমি যখন প্রথম এখানে বাস করতে আসি, তখন বাংলাদেশ কোথায় এবং বাংলা ভাষার অস্তিত্ব সম্পর্কেই জানতো না। আর আজ সেখানেই বাংলা ভাষা আন্দোলনে শহিদের স্মরণে ‘বই মেলা’ পালিত হচ্ছে।
২১শে স্মরণে এই বই মেলায় আয়ারল্যান্ডে ও ইউকের প্রবাসী কবি ও লেখকদের প্রকাশিত বই প্রদর্শিত হয়। প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশী কবি সাহিত্যিক ও লেখকগণের উপস্থিতি মেলাকে আলোকিত করে তোলে। বিশেষ আকর্ষনের মধ্যে ছিল বাচ্চাদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও আঁকা ছবির প্রদর্শনী এবং বিষয়ভিত্তিক রচনা প্রতিযোগিতার বিশেষ পর্ব। ছোট ছেলেমেয়েদের ভাষা আন্দোলনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পরিবেশনা পরিচালনা করেন শায়লা শারমীন। অভি আভিতাভ রায়, জেবুন নাহার প্রমুখ আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত কয়েকজন কন্ঠ শিল্পী সঙ্গীত পরিবেশন করে পরিবেশ মাতিয়ে তোলেন। এছাড়াও পিঠা মেলা, বুটিক বিপনী ও নানা রকম সুস্বাদু খাদ্যের বিপনী বই মেলাতে এক জমজমাট পরিবেশের অবতারণা করে।
সব শেষে
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’
‘It’s bloody 21st February built upon my brother’s blood
How can I forget the history’
গানটি গেইলিক ভাষায় গেয়ে শোনান আইরিশ গায়ক এম ওয়ালস।
প্রবাসী বাঙালীদের সন্তান যারা এইদেশে জন্ম তাদের মাতৃভাষা 'ইংরেজী'। তাদেরকে বাংলা ভাষা চর্চায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য এইসব অনুষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।