নিউইয়র্ক (ইউএনএ): যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাবেক সংসদ সদস্য ও
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ঠিকানা’র সম্পাদকমন্ডলীর
সভাপতি এম এম শাহীন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের জন্য
৩০টি আসন সংরক্ষণের দাবীর পাশাপাশি প্রবাসীদের প্রবাসীদের
অধিকার আদায়ে ১৫টি দাবী জানিয়েছেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ
নির্বাচনে তিনি মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসন থেকে
প্রতিদ্ব›িদ্বতার ঘোষণাও দেন। এম এম শাহীন বলেন, প্রবাসীরা
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রতীক। অতীতে জাতীয় সংসদে
প্রবাসীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলাম, আগামীতে
নির্বাচিত হলে আরো ব্যাপক ভূমিকা রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি
বলেন, দেশে প্রবাসীদের জনপ্রতিনিধি যত বাড়বে, সার্বিক
মানোন্নয়নে দেশ তত দ্রæত পাল্টে যাবে। পাশাপাশি প্রবাসীদের
সম্মান ও মর্যাদার ন্যায্য হিস্যা আদায় করা ততটাই সহজ হবে। তিনি
বলেন, আমাদের নিজেদের সম্মান নিজেদেরই আদায় করে নিতে হবে।
বলেন, প্রবাসীরা বিজয়ী হলে দেশ বিজয়ী হবে। 
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে সোমবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায়
আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এম এম শাহীন উপরোক্ত ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাপ্তাহিক ঠিকানা’র প্রধান সম্পাদক মুহম্মদ ফজলুর
রহমান, নিউইয়র্ক বাংলাদেশী আমেরিকান লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি শাহ
নেওয়াজ, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম
ও কুলাউড়া প্রবাসী প্রবীণ ব্যক্তিত্ব গিয়াস উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে এম এম শাহীন তার দীর্ঘ লিখিত বক্তব্যে প্রবাস
জীবনের কর্মকান্ড ছাড়াও ইতিপূর্বে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত
হয়ে তার নির্বাচনী এলাকা ও দেশের জন্য খেদমত করার কর্মকান্ড তুলে ধরে
বলেন, আবার সুযোগ পেলে আমি প্রবাসী ও দেশের জন্য কাজ করতে
চাই। এজন্য তিনি সকল মহলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে এম এম শাহীন জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের জন্য ৩০টি
আসন সংরক্ষণ ছাড়াও প্রবাসীদের অধিকার আদায়ে ১৫টি দাবী তুলে
ধরেন। অন্যান্য দাবিগুলো হচ্ছে: প্রবাসীদের মধ্য থেকেই সব সময়
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নিয়োগ, যত দ্রত সম্ভব ঢাকা-নিউইয়র্ক
রুটে পুনরায় বিমান ফ্লাইট চালু, বিমানবন্দরে প্রবাসীদের বিশেষ
মর্যাদা প্রদান এবং হয়রানি বন্ধে সার্বক্ষণিক তদারকি ও সরাসরি
হটলাইন চালু, দেশে বিমান ও রেলযাত্রী হিসেবে প্রবাসীদের জন্য কোটা
সংরক্ষণ, জাতীয় পতাকাবাহী বিমানকে দেশে দেশে ব্র্যান্ডিং করা,
প্রবাসীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে আরও
ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, প্রবাসীদের পাসপোর্ট, জন্ম সনদ ও
এনআইডি দ্রæত পাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, প্রবাসীদের স্থাবর-অস্থাবর
সম্পত্তি রক্ষায় অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ
সেল গঠন, পাওয়ার অব অ্যাটর্নির দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতা নিরসন,
রাজউকের হাউজিং প্রকল্পে প্রবাসীদের জন্য প্লট ও ফ্ল্যাট বরাদ্দের সংখ্যা
বাড়ানো, দেশে কোনো প্রবাসী হত্যাকান্ডের শিকার হলে দ্রæত বিচার
ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম নিষ্পত্তি করা, দেশে রেমিট্যান্স
বাড়ানোর জন্য স্থায়ীভাবে প্রণোদনা দেওয়া এবং প্রণোদনা আড়াই
শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা, প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন দেশে
বাংলাদেশের প্রবাসী ব্যাংক স্থাপন করা এবং ঢাকাসহ বিভিন্ন
বিভাগীয় ও জেলা শহরে প্রবাসীদের জন্য আলাদা পল্লী গড়ে তোলা, যাতে
অবসরজীবনে যেসব প্রবাসী দেশে থাকতে চান এবং তারা সেখানে
নিরাপদে থাকতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে এম এম শাহীন বলেন, দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির
প্রধান সোপান রেমিট্যান্স। দেশের অর্থনীতিতে এই রেমিট্যান্স
অক্সিজেনের মতো ভূমিকা পালন করছে। ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দা
পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সংকটমুক্ত করতে ভূমিকা রেখেছিল এই
রেমিট্যান্স। ২০২১-২২ সময়ে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আমাদের
অর্থনীতিকে নতুন এক পরীক্ষার সম্মুখীন করে। কিন্তু এই সংকটময়
সময়েও দেশের অর্থনীতির ওপর কোনো আঁচ লাগতে দেননি দেশপ্রেমিক
প্রবাসীরা। বাংলাদেশ যতগুলো বৈশ্বিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে,

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের কারণে সেখান থেকে রক্ষা পেয়েছে।
গত পাঁচ দশকে দেশের অর্থনীতিতে এই রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ অবদান
রাখছে। আজকের যে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, এর পেছনে প্রবাসীদের অবদান
অনস্বীকার্য। এসব কারণে প্রবাসীদের এসব দাগিুলো এখন সময়ের
দাবিতে পরিণত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এম এম শাহীন বলেন, প্রবাসীরা
রেমিট্যান্স পাঠানোর পাশাপাশি দেশে আধুনিক শিক্ষা, চিকিৎসা ও
তথ্যপ্রযুক্তির জোগান দিচ্ছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলো প্রবাসীরা
প্রতিনিয়ত সংসার, সমাজ তথা দেশের ঘানি টেনে ক্লান্ত হয়ে একটু
সুখের পরশ লাভের প্রত্যাশায় যখন দেশে ফেরেন, তখন তাদের জন্য অপেক্ষা করে
সীমাহীন লাঞ্ছনা-বঞ্চনা, অবহেলা ও পদে পদে হয়রানি। বিমানবন্দর থেকে
পরিবার সর্বত্রই যেন প্রবাসীদের জন্য ফাঁদ পাতা। দেশের বিমানবন্দরে
কন্ট্রাক্ট বাণিজ্য, ইমিগ্রেশনে হয়রানি, লাগেজ সমস্যা, দেশের
বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালে হয়রানি। এত ঝক্কি পেরিয়ে বাড়ি
ফিরেও নেই স্বস্তি। এলাকার মাস্তানদের চাঁদাবাজির শিকার। চাঁদা না
দিলে হুমকি-ধমকি। শারীরিকভাবেও অনেকে লাঞ্ছিত হন। দীর্ঘদিন
প্রবাসে অবস্থান করায় অনেক প্রবাসীর জমিজমা, সহায়-সম্পদও
প্রভাবশালীরা এমনকি নিকটাত্মীয়রাও দখল করে বসে থাকে। এসব নিয়ে
মুখ খুললে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীর ওপর নেমে আসে মানসিক ও শারীরিক
অত্যাচারের খড়গ। শুধু তা-ই নয়, এ নিয়ে হামলা-মামলারও শিকার হন
প্রবাসীরা। ভয়ে বিচার চাইতেও পারেন না। প্রবাসীকে এমনভাবে
হয়রানি করা হয়, যাতে তিনি সব ছেড়ে দেশ থেকে আবার প্রবাসে
ফিরে যেতে বাধ্য হন। এমন অনেক ঘটনাও আছে, সম্পত্তির দখল বুঝে
পাওয়া তো দূরের কথা, কেবল প্রাণ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে বিমানবন্দরে
এসে বিদেশে ফেরত এসেছেন। এসবের অবসান হওয়া দরকার। আর এসব
কারণেই প্রবাসীদের পক্ষে কথা বলতে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে চাই।
প্রবাসীদের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, প্রবাসীরা বিজয়ী
হলে দেশ বিজয়ী হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে এম এম শাহীন বলেন, আগামী নির্বাচনে কোন দল
থেকে নির্বাচন করবো তা প্রবাসী আর এলাকাবাসীর সাথে পরামর্শ
করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।