NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, শনিবার, জুন ১৪, ২০২৫ | ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের ২০টি হলে শাকিব খানের ‘তান্ডব’র শুভ মুক্তি Iran Attack, a Foggy Peace and Truce Deal in Gaza - Dr Pamelia Riviere ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিনন্দিত লায়ন শাহ নেওয়াজ পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাসহ ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল ভারতীয় বিধ্বস্ত উড়োজাহাজে কারও জীবিত থাকার সম্ভাবনা নেই বিয়ানীবাজারবাসীদের উদ্যোগে সাংবাদিক ও লেখক মুস্তাফিজ  শফি সংবর্ধিত ট্রাম্পের নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন উত্তেজনা চরমে বিক্ষোভে উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী, ডেমোক্র্যাটদের ক্ষোভ কোরবানীর ত্যাগের মহিমায় নিউইয়র্কে ঈদুল আজহা পালিত মুসলিম উম্মার ঐক্য, সৌহার্দ্য-সমৃদ্ধি  কামনা
Logo
logo
জামাইদের আদর করতে ব্যায় হবে লক্ষ লক্ষ টাকা রবিবার থেকে শুরু হয়েছে

বগুড়ার কাহালুতে ঐতিহ্যবাহী অর্ধশত জ্যৈষ্ঠ জামাই মেলা


আকবর হায়দার কিরণ   প্রকাশিত:  ১৪ জুন, ২০২৫, ০৭:১৮ এএম

বগুড়ার কাহালুতে ঐতিহ্যবাহী অর্ধশত জ্যৈষ্ঠ জামাই মেলা

এম আব্দুর রাজ্জাক,বগুড়া থেকে :

 আগামী রবিবার থেকে বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের অঁচলবাড়িয়া মেলা দিয়ে শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী অর্ধশত জ্যৈষ্ঠ জামাই মেলা। জ্যৈষ্ঠ জামাই মেলা উপলক্ষ্যে প্রতিটি গ্রামে গ্রামে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।  পুরো জ্যৈষ্ঠ মাস ধরেই আয়োজন করা হচ্ছে প্রায় অর্ধশত জ্যৈষ্ঠ জামাই মেলার। জামাই মেলায় জামাইদের সমাদর করতে ব্যয় হবে শশুর বাড়ির লোকজনের  লক্ষ লক্ষ টাকা। কয়েক ”শ” বছর আগে অসংখ্য সাধু, সন্ন্যাসী, ফকির ও জটাধারী মহিলার অনেক আনাগোনা ছিল অত্র উপজেলায়।  

প্রবীণদের ধারনা মতে তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল আধ্যাত্বিক জ্ঞানের অধিকারী। ঐ সময় এখানকার মানুষের অসুখ-বিসুখ ও বিপদে-আপদে সাধু, সন্ন্যাসী, ফকির ও জটাধারী মহিলাদের সাহায্য নিয়ে বিপদ মুক্ত হত। তাদের দেওয়া তেল, পানিপড়া, তাবিজ, গাছ-গাছরার ওষুধে মানুষরা রোগমুক্ত হত। আর আধ্যাত্বিক জ্ঞানের অধিকারীদের ধর্ম, বর্ণ নির্বিষে সব মানুষই সম্মান করতো। এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় তাদের ভক্তও ছিল অনেকে। বিশেষ করে চুল জটাধারী যে মহিলারা ছিল তাদেরকে বলা হত মাদার। এই মহিলাদের মৃত্যুর পর থেকেই তাদের স্বরনেই সম্ভবত উপজেলার কোন কোন এলাকায় মেলা করা হত।  আবার কারো কারো মতে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে যখন বৃষ্টির পানি হতনা তখন স্থানীয় লোকজন বৃষ্টির জন্য লাল শালু নিশান নিয়ে নেচে গেয়ে গ্রামে গ্রামে চাল তুলতো। সেই চাল দিয়ে বাঁশের মাথায় লাল শালু নিশান টাঙ্গিয়ে মেলার আয়োজন করা হত। আয়োজকরা সেখানে রান্না-বান্না করে সবাই মিলে খেয়ে একসাথে বৃষ্টির জন্য আরাধনা করতো।   সেই সময় থেকেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এই মেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আগে এই মেলা গুলোকে মাদার পীরের মেলা অথবা নিশানের মেলা বলা হয়। পরবর্তিতে এই মেলাগুলোকে ঘিরে অত্র এলাকার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে উৎসবের আমেজে মেতে উঠে সকল বর্ণের মানুষ। মেলা উপলক্ষ্যে জামাই মেয়ে সহ নিকট আত্মীয় -স্বজনদের ধুমধাম করে খাওয়ানো হয়। যার ফলে পরবর্তিতে এই মেলাগুলোর নাম হয় জ্যৈষ্ঠ জামাই মেলা।বর্তমানে বোরো ধান কাটার পর ধনী-গরীব সকলের হাতে থাকে মোটামুটি টাকা পয়সা। সে কারণে জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত উপজেলার প্রায় ৫০ টি স্থানে একদিনের মেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলাগুলোর মধ্যে ঢুকলেই মনে হবে বাংলা সংস্কৃতির অনেক কিছু এখনো হারিয়ে যায়নি।   প্রতিটি মেলাতে চলে বাঙ্গালীর চিরায়িত লাঠি খেলা, পাতা খেলা, চালুন খেলা সহ বিনোদন মুলুক কতই না খেলা। এসবের পাশাপাশি রয়েছে শিশুদের জন্য নাগরদোলা ও চরকি। মেলা উপলক্ষ্যে প্রতিটি গ্রামে চলছে গৃহনীদের ঘর সাজানো ও ধোয়ামুছার কাজ। সেখানে মেলা হবে তার আশে-পাশের গ্রাম গুলোতে একদিন আগেই দাওয়াত করে আনা হয় জামাই, মেয়ে ও নিকট আত্মীয়। তাদের খাওয়ানো হয় মধু মাস জ্যৈষ্ঠের বিভিন্ন ফল ফলাদি।

অত্র উপজেলায় জ্যৈষ্ঠ মাস জুড়েই থাকবে জ্যৈষ্ঠ জামাই মেলার উৎসবের আমেজ। সব বয়সের মানুষের মধ্যেই থাকে মেলাতে খরচের প্রতিযোগিতা। আত্মীয়- স্বজনদের যে যত ভাল সমাদর করতে পারে তার প্রসংশা হয় লোকজনের মধ্যে। মেলাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত পরিচিত লোক দেখলেই স্থানীয় তাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সমাদর করেন।   এই মেলা উপলক্ষ্যেই গোটা কাহালু উপজেলা যেন হয়ে উঠে সকল বর্ণের মানুষের মিলন মেলা। মেলা গুলোর আয়োজন দেখলেই মনে হয় বাংলা সংস্কৃতির কোন কিছুই এখনো হারিয়ে যায়নি অত্র এলাকা থেকে। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা প্রাচীন এই মেলা গুলোকে যেন কোন অপসংস্কুতি গ্রাস করতে না পারে।