NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, রবিবার, জুন ১৫, ২০২৫ | ১ আষাঢ় ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
" ইসরায়েল আন্তর্জাতিক পারমাণবিক স্থাপনা আইন ভঙ্গ করেছে এবং শীর্ষ ইরানি বিজ্ঞানীদের হত্যা করেছে” ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের ২০টি হলে শাকিব খানের ‘তান্ডব’র শুভ মুক্তি Iran Attack, a Foggy Peace and Truce Deal in Gaza - Dr Pamelia Riviere ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিনন্দিত লায়ন শাহ নেওয়াজ পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাসহ ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল ভারতীয় বিধ্বস্ত উড়োজাহাজে কারও জীবিত থাকার সম্ভাবনা নেই বিয়ানীবাজারবাসীদের উদ্যোগে সাংবাদিক ও লেখক মুস্তাফিজ  শফি সংবর্ধিত ট্রাম্পের নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন উত্তেজনা চরমে বিক্ষোভে উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী, ডেমোক্র্যাটদের ক্ষোভ
Logo
logo

দেশ-বিদেশে কদর বাড়ছে নওগাঁর পিতলের চুড়ির


খবর   প্রকাশিত:  ১৫ জুন, ২০২৫, ০১:৫১ পিএম

দেশ-বিদেশে কদর বাড়ছে নওগাঁর পিতলের চুড়ির

এম আব্দুর রাজ্জাক,বগুড়া থেকে : কেউ কাটছেন পিতলের পাত। কেউ জোড়া লাগাচ্ছেন মুখ। কেউ আগুনে পুড়িয়ে ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করছেন। আবার কেউ পরিপূর্ণ চুড়ি চকচকে করতে করছেন ঘষাঘষি। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ চোখে পড়বে নওগাঁ শহরের দপ্তরিপাড়া-মহল্লায়। যেখানে পিতল দিয়ে তৈরি হচ্ছে হাতের চুড়ি বা বালা। আর দেশ-বিদেশে কদর বাড়ছে পিতলের তৈরি এসব চুড়ির। এদিকে এই চুরি শিল্পকে ঘিরে জেলায় প্রতি বছর প্রায় ১০ কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে জানায় নওগাঁ বিসিক শিল্প নগরীর উপব্যবস্থাপক।

জানা যায়, দেশে স্বর্ণের বাজার ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় ২০১২ সালে প্রথম পিতল দিয়ে চুড়ি তৈরি শুরু করেন নওগাঁ শহরের দপ্তরিপাড়া স্বর্ণের কারিগর শেখ কামাল। প্রথমে একা কাজ করলেও বর্তমানে তার কারখানায় কাজ করে ১ হাজার শ্রমিক। যাদের অধিকাংশই নারী। মাসে ৩৬ হাজার জোড়া চুড়ি তৈরি হচ্ছে কামালের কারখানায়। এসব চুড়ি সরবরাহ হচ্ছে- ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়া, নাটোর ও ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। স্বর্ণের মতোই দেখতে এ চুড়ি তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় চায়না পিতলের পাত। ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজিতে কেনা পিতলের এই পাত আনা হয় ঢাকা থেকে। প্রতি কেজি চায়না পিতলের পাত থেকে ৩৮-৪০ জোড়া চুড়ি তৈরি করেন কারিগররা। যেখানে ১ জোড়া চুড়ি তৈরিতে পাত, কেমিক্যাল, কাচা ধুপ, সরিষার তেল, গ্যাস, প্যান, বিদ্যুৎ ও শ্রমিকসহ খরচ পড়ে প্রায় ৬৫-৭০ টাকা। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি জোড়া চুড়ি বিক্রি হয় ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়। সে হিসাবে শেখ কামাল প্রতি মাসে অন্তত ৬৫ লাখ টাকার চুড়ি বিক্রি করেন। এক বছরে তার বাণিজ্য হয় প্রায় ৮ কোটি টাকা। যেখানে সব খরচ বাদেও শেখ কামালের বার্ষিক আয় হয় অন্তত সাড়ে ৪ কোটি টাকা। এক সময় বেকার হয়ে ঘুরে বেড়ালেও গত দুবছর ধরে শেখ শিল্পালয়ে কাটিং মাস্টার হিসাবে কাজ করছেন রতন কুমার। প্রতি সপ্তাহে আয় করছেন সাড়ে ৩ হাজার টাকা।

 

পিতলের চুড়ি তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে রতন কুমার বলেন, প্রথমে শ্রমিক দিয়ে মাপমতো পিতলের পাত কেটে গোলাকৃতি দেয়া হয়। এরপর গালা দিয়ে ভেতরের ফাঁপা অংশ ভরাটের পর নারী শ্রমিকরা নকশা করেন। পরবর্তী সময়ে এটি গ্যাস দিয়ে পুড়িয়ে ভেতরের গালা আবারো বের করা হয়। এভাবে কয়েক হাত বদলের পর ৩ থেকে ৪ বার এসিড পানিতে পরিষ্কার করে সোনার রং দিলেই চুড়িগুলো আকর্ষণীয় রূপ নেয়। তখন আর খালি চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই এটা স্বর্ণ নাকি পিতলের।

গত ৫ বছর ধরে এ কারখানায় নকশার কাজ করছেন দপ্তরিপাড়ার গৃহবধূ ডেজী খাতুন। তিনি বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। তখন কামাল ভাইয়ের এ কারখানায় প্রশিক্ষণ নিয়ে নকশার কাজ শুরু করি। শুরুতে সপ্তাহে ৬০০ টাকা পারিশ্রমিক পেলেও বর্তমানে প্রতি জোড়া চুড়ি তৈরি করে ১৫ টাকা থেকে ২৫ টাকা মজুরি পাই। বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে ২ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা আয় হয়। এখানে উপার্জিত আয় থেকেই বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছোট ছেলেকে স্কুলে পড়াচ্ছি।

শেখ শিল্পালয়ের স্বত্বাধিকারী শেখ কামাল বলেন, স্বর্ণের মতোই আকর্ষণীয় হওয়ায় বিদেশেও এ চুড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে মাঝেমধ্যেই বিদেশে চুড়ি পাঠানো হয়। ভারত ও আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চুড়ি পাঠিয়ে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। চাহিদা থাকায় নিজ নামে রপ্তানি লাইসেন্স করার চেষ্টা করছি। সরাসরি বৈধভাবে রপ্তানির সুযোগ পেলে এই চুড়ি থেকেই কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারব বলে আমি আশাবাদী।

নওগাঁ বিসিক শিল্প নগরীর উপব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন বলেন, শেখ কামালের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এ শিল্পকে ঘিরে পার্শ্ববর্তী রাণীনগর উপজেলায় আরো ৪ থেকে ৫টি নতুন কারখানা গড়ে তুলেছেন উদ্যোক্তারা। বর্তমানে সবকটি কারখানায় প্রতি মাসে অন্তত ৫০ হাজার জোড়া চুড়ি তৈরি হচ্ছে। এসব চুড়ি পাইকারি পর্যায়ে ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছেন উদ্যোক্তারা। সেই হিসাবে জেলায় উৎপাদিত চুড়িকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর অন্তত ১০ কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে। উদ্যোক্তা শেখ কামাল এসব চুড়ি বিদেশেও রপ্তানি করছেন। নিঃসন্দেহে পিতল থেকে চুড়ি উৎপাদন সম্ভাবনাময় একটি শিল্প। উদ্যোক্তারা এ শিল্পের প্রসার ঘটাতে চাইলে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণ সুবিধা দেয়া হবে।