NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, রবিবার, জুন ১৫, ২০২৫ | ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
" ইসরায়েল আন্তর্জাতিক পারমাণবিক স্থাপনা আইন ভঙ্গ করেছে এবং শীর্ষ ইরানি বিজ্ঞানীদের হত্যা করেছে” ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের ২০টি হলে শাকিব খানের ‘তান্ডব’র শুভ মুক্তি Iran Attack, a Foggy Peace and Truce Deal in Gaza - Dr Pamelia Riviere ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিনন্দিত লায়ন শাহ নেওয়াজ পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাসহ ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল ভারতীয় বিধ্বস্ত উড়োজাহাজে কারও জীবিত থাকার সম্ভাবনা নেই বিয়ানীবাজারবাসীদের উদ্যোগে সাংবাদিক ও লেখক মুস্তাফিজ  শফি সংবর্ধিত ট্রাম্পের নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন উত্তেজনা চরমে বিক্ষোভে উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী, ডেমোক্র্যাটদের ক্ষোভ
Logo
logo

তরুনকালে আমাদের প্রিয় ছিলো ফুটবল-- আফজাল হোসেন


খবর   প্রকাশিত:  ১৪ জুন, ২০২৫, ০১:৫৩ পিএম

তরুনকালে আমাদের প্রিয় ছিলো ফুটবল-- আফজাল হোসেন

  তরুনকালে আমাদের প্রিয় ছিলো ফুটবল। তখন আমরা কেউ মোহামেডান, কেউ আবাহনী। ফুটবল সাম্রাজ্য দুই সেরার দখলে। মোহামেডান আর আবাহনীর সাথে আরও অনেকগুলো ফুটবল ক্লাব ছিলো- তারাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সকল দলেই ছিল তারকাদীপ্তি- চৌকষ খেলোয়াড়। যাদের কুশলতা, দক্ষতার প্রতি বড় দলগুলোর ছিলো উল্লেখ করার মতো সমীহ।   বরাবর নামী দুইদলের মধ্য থেকেই যে কোনও একটা দলকেই চ্যাম্পিয়ন হতে দেখা যেতো। কিন্তু দুই ক্লাবকে যখন অন্যদের সাথে লড়তে হয়েছে- প্রতিটি লড়াই হতো বুক কাঁপানো। শেষ বাঁশি না বাজা পর্যন্ত গ্যালারীতে থাকা দুই দলের সমর্থকদের বুক থেকে ঢিপ ঢিপানি যেতোইনা।   দুই দলের সমর্থকদের ছিলো শতরকমের পাগলামো। আমাদের এক বন্ধু প্রিয় দলের খেলার দিন রোজা রাখতো। আর এক চেনা জন স্টেডিয়ামে আসতো লুঙ্গী পরে। তার ধারণা ছিলো, গ্যালারিতে বসে লুঙ্গী ঝাড়া দিলে নিজের প্রিয় ক্লাব গোল খাবেনা।  একবার আবাহনী হারলো মোহামেডানের কাছে। ঢাকা শহরে শোকের ছায়া। রাতে গ্রীন রোড ধরে রিক্সায় বাসায় ফিরছি। চার ছিনতাইকারী পথ আটকায়। দুজনের হাতে গরু জবাই করা ছুরি। বাকি দুজন একটু দূরে।  ছুরিঅলাদের একজন খুব দ্রুততার সাথে আমার পিছনের পকেটে হাত ঢুকিয়ে মানিব্যাগ বের করে নেয়। তারপর সামনের পকেট পরীক্ষা করে দেখে সেখানেও টাকা আছে। একটু বিরক্ত হয়, হওয়ারই কথা। তার এক হাতে ছুরি অন্যহাতে মানিব্যাগ। মানিব্যাগটা বামপাশের ছিনতাইকারীর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে আমাকে আদেশ করা হয়  টাকা বের করে দিতে।  আমার তখন এই খারাপ অভ্যাসটা ছিল। মানিব্যাগ থাকতো পিছনের পকেটে কিন্তু সামনের পকেটে দলামোচড়া করে টাকা রাখার অভ্যাস। যাই হোক, মানিব্যাগে কি আছে দেখতে গিয়ে বামপাশের ছিনতাইকারী দেখতে পায়, খেলা দেখার টিকেট একখানা। টিকেট হাতে নিয়ে সে প্রশ্ন করে- আপনি কোন দলের? একটু ইতস্তত করি। ছিনতাইকারীরা কোন দলের সমর্থক কে জানে!কোন দলের নামে কি বিপদ হাজির হয়ে যাবে ভাবছি।  তাড়া দেয়া হয়- কোন দলের সাপোর্টার? গলা দিয়ে পরাজয়ের দুঃখসহ নিজের প্রিয় দলের নাম বেরিয়ে আসে। মূহুর্তেই ঘটনা, পরিস্থিতি বদলে যেতে দেখি। সামনের দুই ছিতাইকারী তারা পরষ্পরের দিকে তাকায় তারপর বাম পাশেরজন বাড়িয়ে ধরে আমার মানিব্যাগটা। আমি অবাক। পকেট থেকে টাকা বের করার চেষ্টা করছিলাম ঈশারায় বলা হলো- থাক, দরকার নেই। চারজনের একজন খুবই শুকনো গলায় জানায় - আমরাও আবাহনী ভাই। যান আপনি ছিলাম ছিনতাইয়ের শিকার মূহুর্তেই ভাই, আত্মীয় হয়ে গেলাম। থিয়েটার, অভিনয় তখন আমাদের প্রাণের বিষয়। আমরা তখন অনেক ধরণের, বিচিত্র স্বভাবের কিন্তু অভিন্নও ছিলাম। শুধুমাত্র খেলার দিন দুপুরের পর থেকে পাল্টে যেতাম আমরা। হয়ে যেতাম কেউ মোহামেডান কেউ আবাহনী।  নিজেদের গ্যালারিতে  নিজেদের দলের সমর্থকগোষ্ঠী চারপাশে নিয়ে খেলা দেখার আনন্দই ছিল আলাদা। খেলা শেষ হওয়ার পর পরই দুই গ্যালারীর মানুষগুলো আবার একস্থানে মিলিত হয়ে একসাথেই ফিরেছি। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে চলেছে তুমুল তর্ক বিতর্ক।প্রিয় দল নিয়ে খেলার মাঠে, মাঠের বাইরে দর্শকের পাগলামো কম ছিলোনা কিন্তু সামনে না আসা এক সত্যের কথা জানতাম আমরা। দুই ক্লাব এবং অধিকাংশ খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমাদের অনেকেরই পরিচয়, ঘনিষ্ঠতা ছিলো। কারও কারও সাথে ছিলো ভালো বন্ধুত্বও। সেকারণেই জানতাম- মাঠের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী দুই ফুটবল দল, দলের কর্মকর্তা ও অনেক খেলোয়াড়দের মাঠের বাইরে পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল খুবই চমৎকার। তারা কেবল মাঠেই ছিল পরষ্পরের হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বী।  এখন সেই ফুটবল, আনন্দ, প্রতিদ্বন্দ্বীতা, মাঠ ও মাঠের বাইরের লড়াই- শুধুই স্মৃতি। কখনোই ভাবা হয়নি, একদিন খেলার প্রতি মানুষের আর বিশেষ আগ্রহ থাকবেনা। একসময় ফুটবল ক্লাবের বদলে রাজনৈতিক দলের প্রতি জোরদার সমর্থনে জীবন সার্থক- বিবেচনা করবে মানুষ।  চ্যাম্পিয়নশীপ, টুর্ণামেন্টের আদলে স্টেডিয়ামের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে নামাতে পারলে লড়াকু মেজাজের সমর্থকেরা কি খুশী হতেন? বোধহয় দেশবাসীর জন্য সে আয়োজন মন্দ হতোনা।