NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, রবিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
জব্বারের বলীখেলায় আবারও চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ‘বাঘা’ শরীফ Bangladesh reaffirms commitment to fully Implement the CHT Peace Accord Kashmir Violence Conflict can be Solved Diplomatically or Needs a Retaliation Plan Against Pakistan ব্রেন স্ট্রোক পরবর্তী সময়ে সেরে ওঠার যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মত  বিনিময় নিজেকে রাজা-বাদশাহ ভাবছেন ট্রাম্প! ‘দাগি’ দেখতে কয়েদির বেশে সিনেমা হলে শতাধিক নিশো ভক্ত Attorney General James Wins Case Against Google for Monopolies in Digital Advertising নিউইয়র্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংবাদ সম্মেলন নানা অভিযোগ উত্থাপন : বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা  বয়কটের আহবান নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় পুলিশের গুলিতে মানসিকভাবে অসুস্থ  এক ব্যক্তির মৃত্যু
Logo
logo

৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে হাসিনার পতনের প্লট তৈরি করা হয়?


খবর   প্রকাশিত:  ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:২৫ এএম

৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে হাসিনার পতনের প্লট তৈরি করা হয়?

 শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে দেশে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের পর তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনা বারবারই দাবি করেছেন, তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা এই ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নয়। তাদের মতে, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলেই হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এরই মধ্যে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে গার্ডিয়ান একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। 

দ্য সানডে গার্ডিয়ান তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শেখ হাসিনাকে উৎখাতের পরিকল্পনা ২০১৯ সাল থেকেই শুরু হয়েছিল। এই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল 'Documents show U.S. set in motion plan to oust Hasina'। তারা উল্লেখ করেছে, কিছু নথি পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালের প্রথম দিক থেকেই হাসিনাকে অপসারণের পরিকল্পনা করে আসছে। এই নথিগুলোর ওপর ভিত্তি করে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত কিছু সংস্থা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয়। মঙ্গোলিয়া (১৯৯৬), হাইতি (২০০১) এবং উগান্ডা (২০২১) এর মতোই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট (আইআরআই) যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে।  প্রতিবেদন অনুসারে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি (এনইডি) এবং ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) মূলত আইআরআই-কে দায়িত্ব দেয়। নথিগুলোতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের হস্তক্ষেপ প্রতিরোধের জন্য প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ভারতের প্রভাব প্রতিহত করতে এই প্রকল্প প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।  ওয়াশিংটন-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউটের (আইআরআই) মূল উদ্দেশ্য হলো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে গণতন্ত্রের প্রচার করা। এছাড়া ইউএসএআইডি অর্থায়িত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে অংশীদার হওয়া। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউট (এনডিআই), সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ (সিআইপিই), এবং সলিডারিটি সেন্টারের পাশাপাশি আইআরআই এনইডির চারটি মূল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি।   ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি (এনইডি) গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রক্রিয়াগুলোকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য আইআরআইকে অনুদান প্রদান করে। এনইডি ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি একটি বেসরকারি, অলাভজনক সংস্থা যা মূলত মার্কিন কংগ্রেস দ্বারা অর্থায়ন করা হয়। এটি স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মাধ্যমে বার্ষিক অর্থ বরাদ্দ পায়। অন্যদিকে, ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) একটি সরকারি সংস্থা যা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এবং বিদেশী সহায়তার জন্য কাজ করে।  ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ইউএসএআইডি এবং এনইডি থেকে অনুদান পাওয়ার পর আইআরআই ঢাকায় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে একটি প্রকল্প শুরু করে। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় 'প্রমোটিং অ্যাকাউন্টেবিলিটি, ইনক্লুসিভিটি, এবং রেজিলিয়েন্সি সাপোর্ট প্রোগ্রাম (PAIRS)'। এটি ২২ মাস ধরে চলে এবং ২০২১ সালের জানুয়ারিতে শেষ হয়। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং কর্তৃত্ববাদ বিরোধী কণ্ঠস্বরকে জোরদার করা।  প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আইআরআই বাংলাদেশের নাগরিকদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য একটি সামাজিক ক্ষমতায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিল। এর মাধ্যমে আইআরআই স্থানীয় এবং অপ্রথাগত ফোরামগুলোকে লালন করেছে, যেখানে নাগরিক-কেন্দ্রিক আলোচনা হতো।

এই প্রকল্পে আইআরআই বিভিন্ন শিল্পী এবং সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেছে এবং ১১টি অ্যাডভোকেসি অনুদান প্রদান করেছে। এর ফলে তৈরি করা শিল্পকর্মগুলো প্রায় চার লাখবার প্রদর্শিত হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল সঙ্গীত, অভিনয়, শিল্প প্রদর্শনী এবং থিয়েটার পারফরম্যান্স। আইআরআই এলজিবিটিআই, বিহারি এবং অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করেছে। এছাড়া, ৭৭ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং ৩২৬ জন নাগরিককে ৪৩টি সুনির্দিষ্ট নীতিগত দাবি তৈরিতে নিযুক্ত করা হয়েছিল। এই দাবিগুলো ৬৫ জন সরকারি কর্মকর্তার সামনে উপস্থাপন করা হয়।   প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একটি প্রকল্পের অধীনে আইআরআই ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসির (এনইডি) থেকে ৯ লাখ ডলার অনুদান পেয়েছিল। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক বিতর্ক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রান্তিক কণ্ঠস্বর, বিশেষ করে যুবক ও নারীদের ক্ষমতায়ন করা। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে নারীদের উৎসাহিত করা এবং ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে অহিংস রাজনৈতিক অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।  

এই নথিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পাঁচজন কর্মকর্তা এবং ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের তিনজন কর্মকর্তা, ইউএসএআইডির দুইজন কর্মকর্তা এবং একজন রাজনৈতিক কর্মকর্তাকে প্রাথমিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্য সানডে গার্ডিয়ান তাদের নাম প্রকাশ করতে চায়নি। তবে সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা এই পুরো প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধান করেছেন তাদের মধ্যে ক্রিস মার্ফি (ডি-সিটি), এসএফআরসি (দক্ষিণ এশিয়া উপকমিটি), সুমনা গুহ (দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল), ডোনাল্ড লু (স্টেট ডিপার্টমেন্টের ইনকামিং অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি), সারাহ মার্গন (ডিআরএল, স্টেট ডিপার্টমেন্টের ইনকামিং অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি) এবং ফ্রান্সিসকো বেনকোসমে (স্টেট ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র অ্যাডভাইজার) এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।  এই পুরো প্রকল্পটি ঢাকায় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে এবং প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি নাগরিককে সরাসরি প্রভাবিত করেছে।