NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, সোমবার, জুন ১৬, ২০২৫ | ২ আষাঢ় ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
" ইসরায়েল আন্তর্জাতিক পারমাণবিক স্থাপনা আইন ভঙ্গ করেছে এবং শীর্ষ ইরানি বিজ্ঞানীদের হত্যা করেছে” ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের ২০টি হলে শাকিব খানের ‘তান্ডব’র শুভ মুক্তি Iran Attack, a Foggy Peace and Truce Deal in Gaza - Dr Pamelia Riviere ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিনন্দিত লায়ন শাহ নেওয়াজ পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাসহ ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল ভারতীয় বিধ্বস্ত উড়োজাহাজে কারও জীবিত থাকার সম্ভাবনা নেই বিয়ানীবাজারবাসীদের উদ্যোগে সাংবাদিক ও লেখক মুস্তাফিজ  শফি সংবর্ধিত ট্রাম্পের নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন উত্তেজনা চরমে বিক্ষোভে উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী, ডেমোক্র্যাটদের ক্ষোভ
Logo
logo

সরস্বতী পুজা, নরিচ ক্যাথিড্রাল ও আমার মা-- বিশ্বাস করবী ফারহানা


খবর   প্রকাশিত:  ১৫ জুন, ২০২৫, ১০:৩৭ পিএম

সরস্বতী পুজা, নরিচ ক্যাথিড্রাল ও আমার মা-- বিশ্বাস করবী ফারহানা



আজ আনন্দের বন্যায় ভাসছে সারা শহর। বসন্ত বরণ, সরস্বতী পূজা আর ভ্যালেন্টাইন ডে সব উৎসব এবার এক দিনে। সঙ্গত কারণেই আমার মন এতো আনন্দকে গ্রহণ বা ধারণ করার মতো অবস্থায় নাই। আজকের এই উৎসবমুখর দিনে খুব মনে পড়ছে প্রায় ত্রিশ বছর আগের এমন একটি দিনের কথা। তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে দিনব্যাপী চলছে সরস্বতী বন্দনা, উৎসব ও আপ্যায়ন। জগন্নাথ হলের আবাসিক ছাত্র আমার সহপাঠী বন্ধুদের আন্তরিক নিমন্ত্রণে আমরা বেশ ক'জন বন্ধু গিয়ে যোগ দিলাম ওদের সঙ্গে। আনন্দমুখর ঐ পরিবেশে দুপুর গড়িয়ে বিকাল। কিন্তু বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই ফিরে এলাম বাসায়। তখন রমজান মাস চলছিল। আমার মা রোজা রেখেছিল। মনে আছে, মূলত তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য আমিও সেবার রোজা ছিলাম। যা হোক, বন্ধুরা সমাদর করে সরস্বতী পূজার প্রসাদ যা কিছু হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল সেগুলো আম্মার কাছে হস্তান্তর করে আমি ঘরে চলে গেলাম। তখনও জানতাম না আমার জন্য কী বিস্ময় অপেক্ষা করছে। ইফতারের টেবিলে বসে দেখি নানা আয়োজনের মধ্যে আম্মা আমার বন্ধুদের দেওয়া সরস্বতী পূজার প্রসাদও সুন্দর করে পরিবেশন করেছেন। আমার মা যে ধর্মপ্রাণ হলেও ধর্মান্ধ না তা আমি ভালোই  জানতাম। তারপরেও সেদিন আমি আমার মাকে যেন নতুন করে আবিস্কার করেছিলাম। গত শতাব্দীর মধ্য নব্বইয়ের সেই সময়ে শুধু বাংলাদেশেই না, প্রতিবেশি দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উগ্রপন্থা  মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমার মাকে পুনরাবিস্কারের অনুভূতিটা যে অনেক সুখের ও গর্বের ছিল তা বলতে কোনো দ্বিধা নাই।

এই প্রসঙ্গে আরেকটি ঘটনা মনে পড়ছে। আমি তখন যুক্তরাজ্যের নরিচ (Norwich) শহরে থাকি; University of East Angliaতে পিএইচডি'র গবেষণায় রত। আমার মা ও বাবা নরিচে বেড়াতে এলো ২০০২ সালের ডিসেম্বর মাসে। ঐ শহরের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নরিচ ক্যাথিড্রাল। আম্মা ও আব্বাকে নিয়ে আমি সেই ক্যাথিড্রালে নিয়ে গেলাম। প্রায় নয়শ বছরের পুরনো গথিক এই ক্যাথিড্রালের স্থাপত্যশৈলী ওঁরা ঘুরে ঘুরে দেখছিল আর মুগ্ধ হচ্ছিল। তখন শেষ বিকাল। কোনো দলগত প্রার্থনা চলছিল না, কিন্তু ক্যাথিড্রালের বাদক তখন চার্চ অর্গ্যানে একের পর এক প্রার্থনা সংগীত বাজিয়ে চলেছেন। বিশালতা, ঐতিহ্য, নির্জনতা আর সুরমূর্চ্ছনা সব মিলে মিশে যেন অপার্থিব এক আবহ সৃষ্টি হয়েছিল সেদিন। প্রার্থনার জন্য নির্দিষ্ট আসনগুলোর একটিতে বসে আমার মা সেই পবিত্র আবহ যেন মোহাবিষ্টের মতো অনুভব করছিলো। বিকেল গড়িয়ে মাগরিবের ওয়াক্ত হলো। আমার মা বললেন, "এখানে আমার খুব ভালো লাগছে। আমি এখানে বসেই নামাজটা পড়ে নিতে চাই"।  আমি চোখ বুঁজলে আজও দেখতে পাই প্রায় এক শতাব্দীর ইতিহাস বুকে নিয়ে চার্চ অর্গ্যান বেজে চলেছে, আর আমার মা নিবিষ্ট মনে নামাজ পড়ছেন।  সেদিন আবারও আমার মাকে নতুন করে আবিস্কার করেছিলাম, গভীর আনন্দের অনুভূতিতে মনটা ভরে গিয়েছিল।

ধর্মাচরণ ভিন্ন হলেও সকল ধর্মের মূল সুর ও বাণী যে অভিন্ন, তা অনুভব করার জন্য মহা তাত্ত্বিক হওয়ার প্রয়োজন হয় না। আমার মাকে দেখে তা শিখেছিলাম।