NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, রবিবার, জুন ১৫, ২০২৫ | ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
" ইসরায়েল আন্তর্জাতিক পারমাণবিক স্থাপনা আইন ভঙ্গ করেছে এবং শীর্ষ ইরানি বিজ্ঞানীদের হত্যা করেছে” ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের ২০টি হলে শাকিব খানের ‘তান্ডব’র শুভ মুক্তি Iran Attack, a Foggy Peace and Truce Deal in Gaza - Dr Pamelia Riviere ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিনন্দিত লায়ন শাহ নেওয়াজ পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাসহ ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল ভারতীয় বিধ্বস্ত উড়োজাহাজে কারও জীবিত থাকার সম্ভাবনা নেই বিয়ানীবাজারবাসীদের উদ্যোগে সাংবাদিক ও লেখক মুস্তাফিজ  শফি সংবর্ধিত ট্রাম্পের নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন উত্তেজনা চরমে বিক্ষোভে উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী, ডেমোক্র্যাটদের ক্ষোভ
Logo
logo

খালেদা জিয়াকে নিয়ে হঠাৎ কেন এত আলোচনা


খবর   প্রকাশিত:  ১৪ জুন, ২০২৫, ০২:২১ পিএম

খালেদা জিয়াকে নিয়ে হঠাৎ কেন এত আলোচনা

প্রায় তিন বছর আগে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় ফিরেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং বিদেশে যেতে পারবেন  না- এই দুই শর্তে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। পরে দফায় দফায় মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রতিবারই এই দুই শর্ত বহাল থাকে। চিকিৎসার প্রয়োজনে খালেদা জিয়া কয়েক দফায় হাসপাতালে অবস্থান করেন এবং চিকিৎসা নেন। এর বাইরে তিনি আর বাসার বাইরে যাননি। অংশ নেননি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে। দলের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপি’র চলমান আন্দোলনের অন্যতম দাবি হলো খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি। দলটির এমন দাবি সামনে রেখে আন্দোলন করার মানে হলো খালেদা জিয়া এখনো বন্দি জীবনযাপন করছেন।  

 অতি সম্প্রতি সরকারের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রীর বক্তব্যে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে।  বিজ্ঞাপন  আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কিন্তু দণ্ডিত হিসেবে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে দলের আরও কয়েকজন নেতা তাদের বক্তব্যের ঠিক বিপরীত কথা বলেছেন। গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনায় এই বিষয়টি। অনেকের মনে প্রশ্ন ধরেছে হঠাৎ কেন খালেদা জিয়াকে নিয়ে এত আলোচনা। সরকার কী কোনো চাপের কারণে খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার বিষয়ে কথা বলছে নাকি এটি সরকারের নতুন কোনো কৌশল- এমন প্রশ্ন করছেন অনেকে। এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি’র অনেকে।  যদিও সরকারি দলের নেতাদের এ বিষয়ে দেয়া বক্তব্যকে গুরুত্বহীন বলছেন বিএনপি নেতারা। এ বিষয়ে দলটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়াও জানাননি কেউ। গতকাল গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপি’র বৈঠকের পর বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর কাছে সরকারের মন্ত্রীদের দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। তিনি এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। মানবজমিনের তরফে বিএনপি’র কয়েকজন সিনিয়র নেতার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বলেন, বিষয়টিকে তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এজন্য এ বিষয়ে তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।   খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন- এমন বক্তব্য প্রথম দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সচিবালয়ে জাপানি দূতের সাক্ষাতের পর তিনি এমন বক্তব্য দিয়ে বলেন, রাজনীতি করতে পারলেও খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন না। পরে জাপানি দূতের সঙ্গে পৃথক বৈঠকের পর কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকও একই বক্তব্য দেন।

গতকালও আইনমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিষয়ে একই বক্তব্য দিয়েছেন। এ বিষয়ে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।   ওবায়দুল কাদেরের প্রশ্ন খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার সুযোগ কোথায়?: দণ্ডাদেশ ভোগরত অবস্থায় থাকায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার সুযোগ নেই বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের এ কথা জানান। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে কিনা? এসময় সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া, তিনি কি দণ্ডাদেশ থেকে মুক্তি পেয়েছেন? তিনি কি মুক্তি পেয়েছেন? ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়া যেটুকু  সুবিধা পেয়েছেন, সেটা মানবিক কারণে। শেখ হাসিনার উদারতার জন্য পেয়েছেন। অসুস্থ মানুষকে মানবিক কারণে তার দণ্ডাদেশ থেকে মুক্ত নয়, স্থগিত করা হয়েছে। কী জন্য? তিনি অসুস্থ। অসুস্থ না হলে তিনি থাকতেন কোথায়? কারাগারে। তাহলে রাজনীতি করার সুযোগ কোথায়? দণ্ডিত ব্যক্তির রাজনীতি করার সুযোগ কোথায়? দণ্ডিত ব্যক্তি তো জেলে থাকবে। পাঁচ বছর আগে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে বিএনপি। কয়েকটি মামলায় দণ্ড নিয়ে লন্ডনে থাকা তারেক এখনো সেই দায়িত্বেই রয়েছেন। বিষয়টি উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপিও বুঝতে পেরেছে যে, খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, দণ্ডিত ব্যক্তির ব্যাপারে তাদের সন্দেহ না থাকলে তারা ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে কেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছেন?    খালেদা জিয়ার রাজনীতি করা নিয়ে শর্ত দেয়া হয়নি-আইনমন্ত্রী: ওদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, নির্বাহী আদেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির ক্ষেত্রে রাজনীতি করা নিয়ে কোনো শর্ত দেয়া হয়নি, তবে তার শারীরিক অবস্থা রাজনীতি করার মতো নয়।

গতকাল ঢাকায় বাংলাদেশ ইনস্টিউট অব ইন্ট্যারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া ঢাকাস্থ নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন, দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। এর বাইরে কোনো শর্ত নাই। আপনারা প্রশ্ন করেছেন উনি রাজনীতি করতে পারবেন কিনা। আমি সত্য বলি বলেই বলেছি, রাজনীতি করার ব্যাপারে কোনো শর্ত নাই। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০০৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদা জিয়ার। সেদিনই কারাবন্দি হন তিনি। বিএনপি এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। ওই বছরের ৩০শে অক্টোবর উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে। তার আগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি নেত্রীর সাত বছরের সাজা হয়। খালেদা জিয়ার স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৪শে মার্চ শর্ত সাপেক্ষে সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয় খালেদা জিয়াকে। পরের দিন তিনি মুক্তি পান। গত ১৮ই সেপ্টেম্বর ষষ্ঠবারের মতো ছয় মাসের জন্য সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। ফলে আগামী ২৫শে মার্চ পর্যন্ত খালেদাকে কারাগারে যেতে হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, উনি নির্বাচন করতে পারবেন না কারণ উনি দণ্ডিত, রাজনীতি করতে পারবেন না এমন কথা কোথাও নাই। খালেদা জিয়ার বাস্তব পরিস্থিতিও বিবেচনা করতে হবে মন্তব্য করে আইনমন্ত্রী বলেন, তার যে আবেদন তার ভাইরা করেছেন, সেখানে বলা আছে তিনি গুরুতর অসুস্থ। তার যদি আরও ভালো চিকিৎসা না হয়, তাহলে তার জীবন বিপন্ন হবে। তাকে মানবতার খাতিরে প্রধানমন্ত্রী দণ্ড স্থগিত রেখে মুক্তি দিয়েছেন। তিনি অসুস্থ, তিনি রাজনীতি করতে পারবেন কিনা, সেটি আমি বারবার বলেছি, আপনারা দেখেন। স্বাভাবিকভাবে মানুষ মনে করে তিনি অসুস্থ তার রাজনীতি করার অবস্থা নেই। এটাই বাস্তবতা।  

শর্তানুযায়ী খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে পারার কথা নয়-তথ্যমন্ত্রী: শর্তানুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে পারার কথা নয় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।  বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে পাঁচটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কথা জানান। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন। এ বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কেউ যদি দুই বছরের বেশি শাস্তিপ্রাপ্ত হন তিনি নির্বাচন করতে পারেন না। খালেদা জিয়া দুই বছরের অনেক বেশি দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার তো নির্বাচন করার প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে ঘরে থাকার অনুমতি দিয়েছে তার স্বাস্থ্য বিবেচনায়। তার শারীরিক অবস্থা এবং বয়স বিবেচনায় তাকে শর্তসাপেক্ষে কারাগারের বাইরে ঘরে অবস্থান করার অনুমতি দিয়েছে। সেই শর্ত অনুযায়ী তিনি রাজনীতিও করতে পারেন না।

শর্তের মধ্যে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন সেটি নেই। শর্তে বলা হয়েছে, তিনি ঘরে থেকে চিকিৎসা নেবেন। অন্য কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবেন না, সেটি বলা আছে। সুতরাং তার রাজনীতি করতে পারারও কথা নয়। তথ্যমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি বলে থাকেন সেটা বলতে পারেন। যতদূর আইন-কানুন জানি ও বুঝি, আমি ইতিমধ্যে খোঁজখবর নিয়েছি। আইনমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী দুজনই বলেছেন, রাজনীতি করতে বাধা নেই- এ বিষয়ে ফের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আইনমন্ত্রী রাজনীতি করতে পারবেন সেটি বলেননি, আমি খোঁজ নিলাম। আইনমন্ত্রীর বক্তব্য ভিন্নভাবে কোনো কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অন্যরা কে কী বলেছেন আমি জানি না। হাছান মাহমুদ বলেন, আমি সরকারের তথ্যমন্ত্রী হিসেবে বলছি, যে শর্তে তাকে ঘরে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে সেই শর্ত অনুযায়ী তার রাজনীতি করতে পারার কথা নয়।